অর্জিত আনন্দ

আমি এখন ফ্যান্টাসি কিংডম এর একটা গল্প বলব।

তখন ঈদ এর মৌসুম, কয়েকদিন আগে ঈদ গত হয়েছে।

ফ্যান্টাসি কিংডমে একদিন অফিস রুম থেকে বের হচ্ছি, একটা পিচ্চি ছেলে কে দেখলাম একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং কৌতূহলী চোখে রাইড গুলো দেখছে, চড়ছে না। হাতে টিকিট। সঙ্গে বড় কেউ নেই। হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে এর আগে এই পার্ক এ ঘুরতে আসে নি। দাঁড়ালাম, পেছন থেকে আরও ভালভাবে তাকালাম, চেহারা, পোশাক, পায়ের চামড়ার স্যান্ডেল দেখে বুঝতে পারলাম ছেলেটি কোন ওয়র্কশপ এ কাজ করে। তার হাতে যে টিকিট আছে তা ১১০০ টাকার একটি প্যাকেজ (সবগুলো রাইড)।

এই ধরনের ছেলে দের ১১০০ টাকা অনেক কষ্ট করে কামাই করতে/বাঁচাতে হয়। হয়ত এটা তার কয়েক মাসের বেতনের টাকা সঞ্চয়। ছেলেটি এই ১১০০ টাকা অর্জন করে ফ্যান্টাসি কিংডম এ ঘুরতে এসেছে। সে এই পার্ক এ ঘুরেই অনেক আনন্দ পাচ্ছে কারণ এই টাকা টা তার অনেক কষ্টে সঞ্চয় করা । আমার তখন অনেক কষ্ট লাগল কারণ এমন এক পার্ক এ কাজ করি যেটা সব শিশুদের জন্য উন্মুক্ত নয়।টাকা দিয়ে ঢুকতে হয়। সেই পিচ্চিটাকে সাহায্য করতে ইচ্ছা হল।

সে তখন অন্য দিকে হাটা শুরু করেছে। তার পিছু নিলাম। তখন বাবা-মার সঙ্গে আসা অন্য ছেলেমেয়েদের দিকেও চোখ গেল।

অন্য পিচ্চিদের থেকে এই পিচ্চিটার পার্থক্য অনেক। অন্য পিচ্চিরা ভদ্রভাবে চলাফেরা করছে। তাদের চোখে আনন্দ নেই  অথচ এই পিচ্চিটা মহানন্দে ঘোরাঘুরি করছে ।

আমি তার পেছন পেছন হাঁটছি। আমার মুখে হাসি। সে আমাকে তার আনন্দের ভাগ না দিলেও টাকে অনুসরণ করে আমিও তার মতই আনন্দ পাচ্ছি।

আমার টাকে টিকিট এর টাকা টা দিয়ে দিতে ইচ্ছা করছিল। আমি ভাবলাম আমি কতদিন একে টাকা দিতে পারব? আর তাছাড়া এই ১০-১২ বছর বয়স এর এই ছেলে যে ভাবে তার আনন্দ কিনতে/অর্জন করতে শিখেছে তার এই স্বার্থকতা টা কে আমি কেন নষ্ট করে দেব? পরবর্তি তে সে যখন আবার এই পার্ক এ বেড়াতে আসবে তখন আবার সে এরকম কিছুই আশা করবে। তার চেয়ে থাক না, সে এই পৃথিবীটাকে অনেক খানি চিনেছে। এত হানাহানি / নিষ্ঠুরতার মাঝখানেও তার আনন্দ টাকে কামাই করতে শিখেছে, সে অনেক দূর পথ হেঁটেছে। এটাই অন্যদের থেকে তাকে আলাদা করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *